শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:০৭ অপরাহ্ন

চা-শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন

চা-শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন

ইতি বিনতে মজিবর:

চা একটি পানীয় দ্রব্য। এতটা জনপ্রিয় ও অভ্যাসে পরিণত হওয়া দ্রব্য, যাকে আমরা এক রকম আসক্ত বলতে পারি। চা পান করে না, এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুস্কর। শুধু শহর না, গ্রামেও এমন কোনো ঘর নেই যেখানে চা পান করা হয় না। অতি পরিচিত এক পানীয় দ্রব্য চা।

এই চা-কে জনপ্রিয় করার জন্য ব্রিটিশরা কতই না প্রচারণা চালিয়েছিল। দেশের পুরনো রেলস্টেশনগুলো তার সাক্ষ্য। রংপুর যেতে একটি রেল জংশন পড়ে। নাম কাউনিয়া। অনেক দিন আগে একদিন ট্রেনলাইন পরিবর্তন করার সময় স্টেশনে দাঁড়িয়ে চা খেতে গিয়ে নজরে পড়েছিল দেয়ালে আঁকা ছবি ও একটি পঙ্ক্তির দিকে। যেখানে লেখা ছিল, ‘চা পান করুন, ইহাতে নাহিকো কোনো মাদকতা দোষ, ইহা পানে চিত্ত হয় পরিতোষ।’ এরপর ছবি এঁকে বর্ণনা করা ছিল, কিভাবে চা বানাতে হয়। ইতিহাসের সেদিন আর নেয়। চা এখন অন্যতম প্রধান পানীয়। কিন্তু চা শ্রমিকদের দেখলে মনে হয় ইতিহাসের সেই বঞ্চনা আজও জীবন্ত।

চা শ্রমিকদের আন্দোলন হয়েছে। মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম মিলে ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকাসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলনে একসাথে নেমেছেন। প্রতি দু’বছর পরপর চা শ্রমিকদের মজুরি পুর্ননির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এটা হয় দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে। ২০১৯-২০ মেয়াদের চুক্তির সময়সীমা শেষ হয়েছে। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা কিন্তু ২০ মাস চলে গেলেও এখনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। চুক্তি স্বাক্ষরের দাবিতে প্রথমে কয়েক দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি করেছিলেন চা শ্রমিকরা। এরপরও কোনো সমাধান আসেনি চা শ্রমিকদের জীবনে। বরং শ্রীমঙ্গলের চারটি চা বাগানের মালিকের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছিল।

যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, ধর্মঘটের ফলে রাজঘাট চা বাগানের এক লাখ ৪৮ হাজার ৭৩৫ কেজি, ডিনস্টন চা-কারখানায় ৯৯ হাজার ২৫০ কেজি, বালিশিরা চা-কারখানায় ৫০ হাজার ২০৭ কেজি, আমরাইল চা-কারখানায় পাঁচ হাজার ৬৮৩ কেজি কাঁচা চা-পাতা নষ্ট হয়ে গেছে।

কিন্তু অন্যদিকে চা শ্রমিকরা বলছেন, এই চা-পাতা নষ্ট হওয়ার পেছনে মালিক পক্ষই দায়ী। ৯ আগস্ট থেকে তারা আন্দোলনে যাওয়ার আগে মালিক পক্ষকে মজুরি বাড়ানোর জন্য আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তারা টানা চার দিন মাত্র দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি করেছেন। তখন চা শ্রমিকরা কর্মবিরতি করেও বাগানের সব কাজ করেছেন। দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি করেও তারা চা বাগানের ক্ষতি করেননি, কারণ এই বাগান তাদের মায়ের মতো।

চা বাগানের চা শ্রমিকদের চা পাতা তোলার ওপর নির্ভর করে বেতন দেয়া হয়। বিশেষ করে ২৩ কেজি চা পাতা তোলার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। আর এই প্রচলনকে বলে নিরিখ। এই ‘নিরিখ’ পূরণ করলে এ-গ্রেডের বাগানে ১২০ টাকা, বি-গ্রেডের বাগানে ১১৮ টাকা আর সি-গ্রেডের বাগানে ১১৭ টাকা মজুরি পান তারা। এর বাইরে স্থায়ী শ্রমিকদের জন্য সপ্তাহে ৩.২৭০ কেজি, স্ত্রী পোষ্য ২.৪৪ কেজি, নির্ভরশীল ১ থেকে ৪ বছর বয়সীদের জন্য ১.২২ কেজি এবং ৪ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য ২.৪৪ কেজি চাল বা আটা পান। বসবাসের জন্য ঘর আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবাদ করার জন্য এক টুকরো জমি। এই তাদের বরাদ্দ।

এই সামান্য সুবিধা দিয়ে কি জীবন চলে চা শ্রমিকদের? এটাই বড় প্রশ্ন! আর সাম্প্রতিক সময়ে চা শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে এই মজুরি ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছাল।এতেও কি কোনো উন্নতি হবে চা শ্রমিকদের জীবনযাপনে। এটাও সন্দেহ রয়ে যায়। তাহলে আমাদের চা শ্রমিকেরা এতো বঞ্চিত কেন? তাদেরকে জীবনযাপন নিয়ে আমরা কেন বিবেচনা করতে পারি না। আমরা কি তাদের প্রতি সদয় হতে পারি না। বাজারে এক কেজি চাল ৫০ টাকা, একটা ডিম ১৫ টাকা, এক কাপ লাল চা ৬ টাকা। ইচ্ছে হলেও খাওয়ার উপায় কী? অপুষ্টি আর ক্লান্তি জমতেই থাকে শরীরে দিনের পর দিন।
একজন দিন মজুরের জন্য যখন মজুরি নির্ধারণ হয়েছে ৬০০ টাকা, তখনো চা শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা চাইলো, তখনই সব কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়ল! এটা কি এতো বেশি চাইছে তারা মজুরি। আমরা কি আরো ভালো মজুরি দিয়ে বিষয়টি সমাধান করতে পারতাম না। বারবার চা শ্রমিকদের কেন বঞ্চিত হতে হয়। আসুন তাদের নিয়ে একটু সচেতন হয়। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।

ইতি বিনতে মজিবর।
শিক্ষার্থী, বিলচলন শহীদ শামসুজ্জোহা সরকারি কলেজ।
বিভাগ : সমাজবিজ্ঞান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877